বেনাপোলে ট্রাকভাড়া দ্বিগুণ, পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা

 প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৩৫ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ


মনা,বেনাপোল (যশোর)প্রতিনিধিঃ

ট্রাক সংকট এবং ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে সম্প্রতি পণ্য আমদানি বেড়েছে। এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে গিয়ে আমদানিকারক, পরিবহন এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।


তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ফেরিঘাটে দিনের পর দিন ট্রাক আটকে থাকা, মাওয়া ফেরিঘাট বন্ধ থাকা এবং ঢাকা থেকে ফেরার পথে কোনো পণ্য না পাওয়ার ফলে পরিবহন মালিকরা হঠাৎ করে ট্রাকের ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।


আমদানি-রফতানির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে সম্প্রতি রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল, তুলাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। এজন্য ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা অন্যান্য আমদানি পণ্যের চেয়ে এসব হালকা পণ্য পরিবহনের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।কারণ হিসেবে সূত্রগুলো বলছে, এসব পণ্য পরিবহন করলে তুলনামূলকভাবে তারা ভাড়া বেশি পান। তারা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। ফেরিঘাটে চালকদের অহেতুক সময়ক্ষেপণ করতে হচ্ছে না।


পণ্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত বেনাপোল বন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, বেনাপোল থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের জন্য যত ছোট ট্রাকই হোক না কেন ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩২ হাজারের নিচে কোনো ভাড়া নেই। এছাড়া পণ্য পরিবহনে পর্যাপ্ত ট্রাক নেই। ট্রাক সংকটে অনেকে আমদানি পণ্যের শুল্ক পরিশোধ করেও বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারছেন না।


সূত্রগুলোর দাবি, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টায়ার, ট্রাকের যন্ত্রাংশের মূল্য এবং ফেরি ভাড়া বৃদ্ধির কারণেই ট্রাকের ভাড়া এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।


ঢাকার নবাবপুরের তালুকদার ট্রেডার্স নামের আমদানিকারক ইকবাল আহমেদ বলেন, তার ব্যবসার কেমিক্যাল ভারত থেকে আসে। তার কয়েকটি পণ্যের চালান গত ১৫ নভেম্বর বেনাপোল বন্দরে এসেছে। বন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতাও শেষ করেছেন। তবে অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ার কারণে তিনি মাল বেনাপোল বন্দর থেকে ফ্যাক্টরিতে নিতে পারছেন না।


একই কথা জানালেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের রোজ ট্রেডিং নামের আমদানিকারক ফায়জুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ায় আমদানি করা প্রিন্টিং কালি ফ্যাক্টরিতে নিলে লাভ তো দূরে থাক, আসলও থাকবে না।’


নারায়ণগঞ্জের ভোলতা রূপগঞ্জের কোয়ালিটি ক্যান ইন্ডাস্ট্রিজের কমার্শিয়াল ম্যানেজার বিপ্লব সাহা

 বলেন, ‘আমাদের আমদানির কয়েকটি পণ্যের চালান বেনাপোল বন্দরে পড়ে আছে। অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়া ও ট্রাক সংকটের কারণে মালামাল সময়মতো না আনতে পারায় ফ্যাক্টরি কাঁচামালের অভাবে বন্ধের উপক্রম।’


বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, বেনাপোল বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের ভাড়া এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ফেরি ভাড়া ও টোল আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজট এবং ঢাকা থেকে আসার পথে তেমন পণ্য না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।


বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, আগে বেনাপোল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ২২ হাজার ও সর্বোচ্চ ২৪ হাজার টাকা। একই ট্রাকের ভাড়া এখন বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। একইভাবে কাভার্ডভ্যানের ভাড়া ২৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এত বেশি ভাড়া দেওয়া সত্ত্বেও খালি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেনাপোল বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।


বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, পরিবহন সংকটের জন্য ট্রাক ভাড়া এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।


তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করেন লাভের আশায় কিন্তু পরিবহন খরচ এতো বেড়েছে যে এতে তাদের লোকসানে পড়তে হবে। কাঁচাপণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাচ্ছেন।

সারাদেশ এর আরও খবর: