দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে স্বচ্ছ রাজনীতির মহাপুরুষ,সাবেক সফল চেয়ারম্যান-জনাব নুরুজ্জামান টুলু মিয়া।

 প্রকাশ: ১১ মে ২০২০, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন   |   বিনোদন


প্রতিবেদক, মোঃ রফিকুল ইসলামঃ


 আজ ১৭ রমজান,২০২০

ঠিক ২ বছর আগে ২০১৮ সালের ১৭ রমজানে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় সুবিশাল এক শূণ্যতা সৃষ্টি হয় যেটা আর কখনো পূরণ হবে না । সময়ের  সেরা সন্তান, স্বচ্ছ রাজনীতির মহাপুরুষ,সমাজ সেবক, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন এর সাবেক সফল চেয়ারম্যান (১৯৮৫-'৮৯) -"জনাব নুরুজ্জামান টুলু মিয়া"

৯২ বছর বয়সে আমাদের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বাসীকে  অথৈ সমুদ্রের বুকে ঢেলে দিয়ে ওপারে পাড়ি জমান।

যিনি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন তথা দক্ষিণ মুকসুদপুরের বুকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন যে:"কোন বিতর্ক বা গ্যাঞ্জাম-গোলযোগ ছাড়াও সমস্যার সমাধান দেয়া যায় তথা সর্বপ্রথম স্বচ্ছ-রাজনীতির প্রবর্তন করেন" । সে সবসময় বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বাসীর কাছে এ্যান্টিবায়োটিক(জীবন রক্ষাকারী ওষুধ) হিসেবে কাজ করেছেন ।ঐ এলাকায় অন্য কারো‌ কাছে যেয়ে যখন আর কাজ হতো না,তখন‌ স্বচ্ছ বিচারের আশায় সকলে তার দ্বারস্থ হতেন।এমন এ্যান্টিবায়োটিক ইউনিয়ন বাসী আর কখনো পাবে কিনা - সেটাই এখন দেখার বিষয়..

বাস্তব জীবনে উনি ছিলেন "গরীবের ডাক্তার" । একবার দশ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে দোয়াত(আগের যুগে লেখার কালি হিসেবে ব্যবহৃত হতো)এর কাঁচে আমার বাম পায়ের তালু কেটে চৌচির হয়ে যায়। আমাকে নেয়া হলো "গরীবের ডাক্তার"এর বাড়ীতে । ডাক্তার সাহেব তালুতে ৯টি সেলাই দিয়েছিলেন কিন্তু টাকা নেন নি । আবার বাম হাতের তালুতে ঘা নিয়ে গরীবের ডাক্তারের কাছে গেলেন ধোপাকান্দির গ্রাম পুলিশ দীনেশ চন্দ্র রায়। ডাক্তার সাহেব বললেন দীনো তোমার ঘাঁ শুকিয়ে যাবে কিন্তু দাগ থেকে যাবে জবাবে দীনো দাদা বললেন:"দাগ যতদিন হাতে আছে আপনি ততদিন সাথে (হৃদয়ে) রবেন" ।আজ আমার ও দীনো দাদার মতো হাজারো মানুষের দাগ আছে ডাক্তার সাহেবও হৃদয়ে আছেন ।থাকবেন চিরকাল কারণ:কাজ করার পরে সে কখনো টাকা চাইতো না,কেউ মনে করে দিলে নিতেন,না হলে টাকা নিতেন না। তার কাছে দরিদ্র মনে হলে  অনেকের টাকা আবার ফেরত দিয়েছেন । এভাবেই সারাটা জীবন "গরীবের ডাক্তার সাহেব" অত্র দক্ষিণ মুকসুদপুর বাসীর হৃদয়ের মনিকোঠায় আসন গেড়ে আছেন । একটি কথাই বারেবারে মনে পড়ে যায় - "কীর্তিমানের মৃত্যু নেই"...

তিনি সবসময়ই সাম্যবাদী ছিলেন। এজন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।এর প্রধান‌ কারন হলো উনার বাবার দাদা(অর্থাৎ ২ পুরুষ আগে)"জনাব পিজোর উদ্দীন দারোগা"ব্রিটিশ‌আমলের জমিদার ছিলেন।চিতলকোনা,ধারেন্দা,বহুগ্রাম সহ বর্তমান বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন  তার জমিদারকৃত এস্টেটের আওতায় ছিলো।

কথায় বলে:"বাঁশের গোড়া দিয়ে বাঁশ - ই হয়"।সম্মান মহান আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীন কর্তৃক প্রদত্ত।

তার ই ধারাবাহিকতায় এখনো চলছে ঐতিহ্য বাহী এই ফ্যামিলিটির সম্মান, মর্যাদা ও নেতৃত্বদানের অসীম ক্ষমতা।

সংসার জীবনে জনাব নুরুজ্জামান টুলু সাহেব ছিলেন‌ রাজনীতির মতোই স্বচ্ছ ।তার স্ত্রী মিরোজা জামান(৭৩)ও তার মতোই হাস্যোজ্জ্বল মানুষ। এছাড়াও তার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে(নাফিজা ইয়াসমিন-৫৭,জেফরিনা জামান জুলি-৩৪)এদের মধ্যে বড় ছেলে জনাব কামরুজ্জামান নেওয়াজ মিয়া ৩০ বছর বয়সে এক্সিডেন্টে পরোপারে পাড়ি জমান।

তবে, শতাব্দীর সেরা সন্তানের মৃত্যু যদি মুকসুদপুর বাসী তথা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বাসীর জন্য দুঃসংবাদ হয়ে থাকে তাহলে মহাপুরুষের ছোট ছেলে-"জনাব বদরুজ্জামান এজাজ"(৫৩)ও পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে এবং বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বাসীর সেবায় প্রায় ২০ বছর ধরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন-এটা চরম সুসংবাদ!!!!


সকল দৃষ্টিকোন থেকেই বাবার পথে হাঁটতে চেষ্টা করছেন তিনি।

নুরুজ্জামান সাহেবের কাছে গ্রামের এজলাসে বসার আগের রাতের কোন‌ তদবিরে কাজ হতো না।

সংখ্যালঘুদের বা দরিদ্রদের কথা এজলাসে সবসময়ই আগে শুনতেন। আমরা সকলে মনেপ্রাণে দোয়া করি মহান আল্লাহ তাআলা রাব্বুল আলামিন যেন এই মহান কীর্তিমান কে জান্নাত বাসি করেন - আমিন!!! সময়ের সেরা সন্তানের কথা মনে পড়তেই বিখ্যাত, জাতীয় ও প্রিয় কবি নজরুল ইসলামের শ্রেষ্ঠ- 'বিদ্রোহী কবিতা'র‌ কথা হৃদয়ে বেজে ওঠে:


"বল বীর-

বল-উন্নত মমশির,

শির নেহারী,আমারী নতশির !!!

ঐ শিখর হিমাদ্রীর  !!!

বিনোদন এর আরও খবর: