যশোর বেনাপোল চেকপোস্টে এবছর উদযাপন হচ্ছে না আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অমর একুশ

 প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন   |   খুলনা



মনা, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

-প্রতিবছরের মত এবার জাঁকজমক ভাবে ভারত বাংলাদেশ যৌথ ভাবে পালিত হবে না অমর একুশ। প্রতিবছর বেনাপোল নোম্যান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদবেদীতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এর মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন হত। দুই বাংলার ভাষা প্রেমীরা সকাল থেকে দলে দলে মিলে মিশে একাকার হয়ে যেত। বিদায় বেলায় একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ত। সীমানা পেরিয়ে এ মিলন মেলায় দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ যোগ দিত। চলতো সকাল থেকে ভাষা শহীদদের নিয়ে আলোচানা, কবিতা,গান নৃত্য। এ বছর ভাষা দিবসটি দুই বাংলার মানুষ এক হয়ে উদযাপন না হওয়ায় এরই মধ্যে অনেকে মন্তব্য করেছেন তাহলে কি কালের পরিক্রমায় বিলুপ্তি হতে যাচ্ছে দুই বাংলার থৌথ আয়োজনে ভাষা দিবসটি।


ভৌগলিক সীমারেখা পেরিয়ে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে দুই দেশের মানুষ বুকে কালো ব্যাজ, মুখে ”আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...। নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, ফুলে-ফুলে ছয়লাব নোম্যান্সল্যান্ড। তখন দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ওই স্থানে আবেগাপ্লুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সকল ভেদাভেদ যেন ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য। ফুলের মালা দিয়ে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ বাঙালির নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।


কিন্তু এবছর  বেনাপোলে খুলছে না সীমান্ত গেট। এবার যৌথ ভাবে একুশের কোন অনুষ্ঠান নোম্যান্সল্যান্ডে হবে না  কি কারনে তার কোন সুদিনির্দিষ্ট কারন জানা যায়নি। তবে দুই দেশের মুষ্টিমেয় কিছু ভাষা প্রেমী মানুষ বেনাপোল পেট্রাপোল নোম্যান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পন করবেন বলে জানা গেছে।


এক সময় বনগাঁর কিছু সংস্কৃতি কর্মী ‘একুশে উদযাপন কমিটি’ গড়ে অনুষ্ঠান করা শুরু করেছিলেন ২০০২ সাল থেকে বেনাপোল চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে। তখন থেকেই বছরের একদিন ২১ ফেব্রুয়ারি গেট খুলে দেওয়ার প্রথা চালু হয়। পরে তাদের সরিয়ে সিপিএম এমপি অমিতাভ নন্দীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেয় ‘গঙ্গা-পদ্মা মৈত্রী সমিতি’। রাজ্যে পালাবদলের পরে আবার নিয়ন্ত্রণ যায় তৃণমূল প্রভাবিত ‘দুই বাংলা মৈত্রী সমিতি’র হাতে। যার প্রধান উদ্যোক্তা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। অপরদিকে পর্যায়ক্রমে  বাংলাদেশের পক্ষে যশোর-১ আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন ও বেনাপোল পৌর সভার সাবেক  মেয়র আশরাফুল আলম লিটন নেতৃত্ব দেয় । প্রথম দিক থেকে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়ে আসলেও ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এমপি-মেয়র দ্বন্দ্বের কারণে এমপিকে বাদ দিয়ে মেয়র একাই অনুষ্ঠান করে আসছিলেন। ২০১৯ ও ২০২০ সালে মেয়রকে বাদ রেখে এ অনুষ্ঠান করছেন এমপি অনুসারীরা।


এ বছর ২১ উদযাপন না হওয়ায় স্থানীয়রা সহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নড়াইল থেকে ভারত গামি অমিতাভ সিংহ নামে  একজন পাসপোর্ট যাত্রী বলেন, প্রতিবছর ২১ ফেব্রয়ারী ভাষা দিবস উদযাপন করতে বেনাপোলে আসতাম। এবছর দিবসটি না হওয়ার জন্য পাড়ি জমাচ্ছি ভারত । সেখানে কয়েকটি স্থানে ভাষা দিবস উদযাপন হবে।


বেনাপোল দিঘিরপাড় গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, আস্তে আস্তে কি বিলুপ্তি হয়ে যাবে দুই দেশের ভাষা দিবস উদযাপন। প্রতিবছর এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম। আমাদের নতুন প্রজন্ম ধর্মীয় উৎসব, ঈদ কোরবানি ও দুর্গাপুজার চেয়েও দিনটি আনন্দের সাথে উদযাপন করত। আমরা এবছর দিবসটি উদযাপন হবে না জেনে বিস্মিত, স্তম্ভিত হতাশ।


দৈনিক আলোচিত বার্তা এর বেনাপোল প্রতিনিধি, মোঃমোশারেফ হোসেন মনা বলেন, আস্তে আস্তে কালের পরিক্রমায় দিনটি বিলুপ্তি হতে যাচ্ছে। এখন আর দুই বাংলার মানুষের মধ্যে হয়ত আর হবে না। যার যার দেশে তার তার করতে হবে। এই দিনটিকে নিয়ে দুই দেশের মানুষের মাঝে বয়ে যেত আনন্দের বন্যা। খুশির জোয়ারে বিদায় বেলায় দুই দেশের কলাকুশীরা একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ত কিছু সময়। আবার দেখা হবে সেই প্রত্যাশায় বিদায় ঘটত দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের।

খুলনা এর আরও খবর: