কাজিপুরে যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের কাজিপুরবাসীর জন্য বড় দুঃখ যমুনা নদীর ভাঙন। জেলার উত্তরে প্রবাহিত প্রমত্তা যমুনা এককালে কাজিপুরকে উর্বর ভূমিতে পরিণত করলেও এর করালগ্রাসে কত এলাকা যে বিলীন হয়েছে তার কোনো হিসাব পরিসংখ্যান নেই। পূর্ব কাজিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। এককালের নদী বন্দর কাজিপুরের ভাগ্যেও একই পরিণতি হয়েছে। কাজিপুর ঘাটের ডান ও বামে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে চিততরে হারিয়ে গেছে।
যমুনার ভাঙন রোধে বড় ধরনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপই এ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় অধিবাসীরা জানালেন, নাটুয়ারপাড়া হাট-বাজার
প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র। হাট ও বাজারটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। নাটুয়ারপাড়া রক্ষাবাঁধ ও ডিক্রী তেকানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়েছে। কাজিপুর থানা ও নাটুয়ারপাড়া পুলিশ ফাঁড়িটি গত কয়েক বছর আগে আস্তে আস্তে নদীগর্ভে চলে যায়। এখন যেখানে নাটুয়ারপাড়া বাজার প্রসিদ্ধ এই ব্যবসা মোকাম এক সময় সেখানে ছিল না। ছিল নদীর পাড়ে। কিন্তু নাটুয়ারপাড়া বাজারের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছে গত কয়েক বছরে। তিলে তিলে নদী বাজারটি বিলীন হয়ে গেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩৬৮.৬৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাজিপুর উপজেলা ভৌগোলিকভাবে বেস্টন করে আছে ২টি নদী। কয়েক বছর আগে যমুনার ভাঙন পশ্চিমের অর্থাৎ ডানতীর জনপদকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। কাজিপুর সদর, মাইজবাড়ী, শুভগাছা ও গান্ধাইল ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি নদী ভাঙন কবলিত। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে অবস্থা সবচেয়ে বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এসব এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে।
কাজিপুর উপজেলায় পূর্ব অঞ্চলের ভাঙন কবলিত এলাকায় এ সংখ্যা আরো বেশি। সূত্র জানা গেছে, ১৪/১৫ কিলোমিটার নদী শাসন করলেই এই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এই উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। ফলে নদী তীর ভেঙেই চলেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কিংবা কোন সরকারেরই মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীটির পুরোপুরি পাড় শাসন করতে পারলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এদিকে খাল-বিল ও নদীবেষ্টত কাজিপুরের চারদিকে নদীপথগুলোও এখন সীমিত হয়ে যাচ্ছে। বর্ষায় উপজেলায় সবগুলো নদী ও খাল ডোবা যখন পানিতে টইটুম্বুর থাকে তখন এর অন্য এক রকম চেহারা দেখা যায়। বর্ষার পর চেহারায় শুষ্কতা আসে। নদী ভাঙন কবলিত অধিবাসীরা তাদের এই দুর্দশা থেকে মুক্তি চান।