ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৩নং ওয়ার্ডে রাস্তা নির্মাণে তানিয়া তাপসীর বাঁধা

 প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ


ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৩নং ওয়ার্ডের বামনারটেক ৩নং রোডের নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী, প্রশাসন, এলাকাবাসীর নিষেধ উপেক্ষা করে জেড-৭, এস-৩ বামনারটেক সড়কে প্রাচীর নির্মাণে উন্নয়ন কাজে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগের নিকট আত্মীয় তানিয়া সুলতানা তাপসী সড়কে প্রাচীর তৈরি করায় রাস্তা নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তুরাগ থানার বামনারটেক ৩নং রোডের প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কোর। বাস্তবায়নে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মাহাবুব এন্ড ব্রাদার্স’। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এই উন্নয়নকাজে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে প্রয়াত তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাশেমের নিকট আত্মীয় এবং মৃত শাহিন মাতব্বরের স্ত্রী তানিয়া সুলতানা ওরফে তাপসী।


সরজমিনে জানা গেছে, তানিয়া সুলতানা ওরফে তাপসী নিজ বাড়ির সামনের অংশে সড়কে একটি পাকা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেছে। এতে ২১ ফুট প্রশস্ত রাস্তা তৈরির কাজে সরাসরি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি জানার পরে সেনাবাহিনীর সদস্য, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং এলাকাবাসীর গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তানিয়া সুলতানাকে প্রাচীর নির্মাণ না করতে অনুরোধ জানালেও তিনি তা অগ্রাহ্য করেন।


স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তানিয়া সুলতানা ওরফে তাপসী স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার নিকট আত্মীয়। বিগত দিনে এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এখন সরকারি প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তানিয়া সুলতানা তাপসী শুধু নাগরিকদেরই নয়, বরং সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের দিকনির্দেশনাকেও উপেক্ষা করছে। তানিয়া সুলতানা তাপসী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মীদের সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনই তানিয়া সুলতানা হুমকি-ধামকি ও গালিগালাজ করছে এবং কখনো কখনো লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে। এতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, এবং পুরো প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


এবিষয়ে মাহবুব এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জনাব হুমায়ুন বলেন, রাস্তাটি বহুদিন ধরে সংকীর্ণ ও চলাচলের অযোগ্য ছিল। সরকারিভাবে প্রশস্তকরণ শুরু হওয়ার পর তা এক মহিলার একগুঁয়ে আচরণে থমকে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, উদ্বেগ এবং হতাশা বিরাজ করছে।এখন শুরুতেই বাধা তৈরি হলে উন্নয়ন থমকে যাবে।


বামনারটেকের প্রবীণ এক নাগরিক বলেন, সরকারি কাজে এমনভাবে বাধা দেওয়া আইন অনুযায়ী অপরাধ। তানিয়া সুলতানা তাপসীর এহেন কর্মকাণ্ড শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও প্রশাসনের অবজ্ঞার শামিল। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রাখে। কোনো ব্যক্তির গোঁয়ার্তুমি জনস্বার্থের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। সরকারের উচিত কঠোর হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করা।


এবিষয়ে সমাজ সেবক ও ৫৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিল প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুরুজ্জামান বলেন, একজনের একগুঁয়েমি ও অসহযোগিতার কারণে যদি উন্নয়নকাজ থমকে যায়, তবে তা শুধু একটি রাস্তার সমস্যা নয়, এটি বৃহত্তর সামাজিক শৃঙ্খলা, নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের প্রশ্ন। ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প নির্বিঘ্নে বাস্তবায়নের জন্য এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

 

এদিকে তানিয়া সুলতানা তাপসীর প্রতিবেশী এবং দেবর জনাব হাসান ইকবাল বলেন, ভাবি কারো কথা গ্রাহ্য করে না। দীর্ঘদিন আমাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক নেই। আমার কথা ভাবি শুনবে না। এবিষয়ে প্রশাসনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।


সরকারি কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়ে তানিয়া সুলতানা তাপসীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। উল্টো সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ করেন।


এদিকে তানিয়া সুলতানা তাপসীর অবাধ্যতা ও স্বার্থপরতা যাতে পুরো এলাকাকে দুর্ভোগে না ফেলে, সে বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন, ওই এলাকার সুশীল সমাজ।

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: