পিতার জন্য সন্তানের আকুতি!

 প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন   |   বরিশাল


মোঃ ইমরান হোসাইন,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:

বরগুনার আমতলীতে খেলতে গিয়ে দুই শিশুর মধ্যে ধস্তাধস্তিতে হামিম নামে এক শিশুর চোঁখে আঘাত লেগে আহত হওয়ার ঘটনার মামলায় অপর শিশু আলিফের পিতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। 


এদিকে শিশু আলিফ এবং তার বাবার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ছবিতে দেখা যায় হাতকড়া পরিহিত বাবাকে জরিয়ে ধরে আছে শিশু আলিফ। 


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমতলী পৌরসভার সবুজবাগ এলাকার আবু হানিফের পুত্র হামিম ও একই এলাকার বাহাদুর খানের পুত্র মোঃ আলিফ। দুই শিশুর বাসা পাশাপাশি হওয়ায় তারা সারাক্ষণ এক সাথেই থাকে এবং খেলাধূলা করে। পারিবারিক ভাবেও তাদের দুই পরিবারের মধ্যে রয়েছে অনেক ঘনিষ্ঠতা। গত এক মাস পূর্বে বাড়ির উঠানে বসে খেলছিলো শিশু হামিম ও আলিফ। এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড় হলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে শিশু হামিমের চোঁখে আঘাত লেগে সে গুরুত্বর আহত হয়। এরপর আহত আলিফের পরিবার আহত শিশু হামিমের চিকিৎসা করায় এবং চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার গ্রহণ করেন। 


ওই ঘটনার এক মাস পরে গত ১ নভেম্বর (সোমবার) আহত শিশু হামিমের মা মাইসুরা বেগম বাদী হয়ে অপর শিশু আলিফের বাবা বাহাদুর খানসহ আরও চার জনকে আসামি করে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। গত ১৫ নভেম্বর (সোমবার) ওই মামলার শিশু আলিফের বাবা বাহাদুর খান আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তারপর যখন বাবা বাহাদুরকে হাতকড়া পড়িয়ে অন্যান্য আসামীদের সাথে বরগুনা জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন বাহাদুরের শিশু পুত্র আলিফ তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকে। পিতা পুত্রের ওই দৃশ্য স্থাণীয় কেহ ক্যামেরাবন্দি করে ঘটনার কারন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছেড়ে দেয়। যা মুহুর্তে ভাইরাল হয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। 


আলিফের চাচা এইচএম জুয়েল মুঠোফোনে বলেন, সামান্য একটা বিষয়টা নিয়ে তারা আদালত পর্যন্ত গেছে। স্থানীয়রা শালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা আহত শিশু হামিমের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহন করেছি। এখন ক্ষতিপূরণ দিতেও চেয়েছিলাম। তবুও তারা মামলা উঠিয়ে নেয়নি। আজ আমার নির্দোষ ভাই বিনা দোষে জেল খাটছেন।


স্থাণীয় প্রতিবেশীরা জানায়, বিষয়টি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেখেছি। শিশুরা একে অপরের সাথে ঝগড়া করবে আমার মিশবে। কোমলমতি শিশুদের ঝগড়া দিয়ে পরিবারের মধ্যে বিবাদ ছড়ানো ঠিক হয়নি। একটি কথা সকলকে বুঝতে হবে শিশুরা যা শিখে তা তাদের পরিবার থেকেই শেখে আর পরিবার সচেতন হলে শিশুরা ভালো মানুষ হবে। 


আমতলী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোয়াজ্জেম হোসেন ফরহাদ মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি শুরু থেকেই আমি জানি। ওরা দু’জনেই শিশু, খেলার ছলে এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে এজন্য মামলা পর্যন্ত যাওয়া ঠিক হয়নি। আমিসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা আহত শিশু হামিমের পরিবারকে মিমাংসার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের বলেও আর মামলা উঠায়নি। 


এ বিষয়ে কথা বলতে আহত শিশু হামিমের পরিবারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা হলেও তারা ওই ঘটনা ও মামলার বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

বরিশাল এর আরও খবর: