বক্ষব্যাধির প্রশাসনিক কর্মকর্তার তিন ভাই-ই ঠিকাদার।

গোপালগঞ্জ স্টাফ রিপোর্টার
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাট্টইডোবা গ্রামে। বাবার নাম মৃত মুন্সী আহমেদ আলী। মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন এলাকায় পরিচিত ঝন্টু মুন্সী হিসেবে।
মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইনের আপন বড় ভাই মুন্সী ফররুখ হোসাইন ওরফে মিন্টু মুন্সী সাজাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইনের ভাই মিন্টু মুন্সী জাতীয় পার্টি করলেও এখন আওয়ামী লীগ করেন বলে কাশিয়ানীর বাসিন্দারা জানান। গোপালগঞ্জের সাবেক একজন মন্ত্রীর পরিচয় সামনে রেখে মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন ওরফে ঝন্টু মুন্সী, ভাই মুন্সী ফররুখ হোসাইন ওরফে মিন্টু মুন্সী, মুন্সী ফারুক হোসাইন ওরফে পিন্টু মুন্সী ও আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে নান্টু মুন্সী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঠিকাদারি শুরু করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তারা বহুল আলোচিত ‘মিঠুবিরোধী সিন্ডিকেট’ হিসেবে পরিচিত। সরঞ্জাম সরবরাহ না করে বিল তুলে নেওয়া, নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ ও ৪০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে এই চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এরাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের বহুল আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারির নেপথ্য নায়ক। এই চার ভাই এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কয়েকটি মামলার আসামি। আরও কয়েকটি অনুসন্ধান চলমান আছে তাদের বিরুদ্ধে। পর্দা কেলেঙ্করির মামলায় জেল খেটে গত সপ্তাহে ভার্চুয়াল আদালতে জামিন পেয়েছেন তাদের দুজন মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন ও আবদুল্লাহ আল মামুন।
কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাজাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুন্সী ফররুখ হোসাইন ওরফে মিন্টু মুন্সী একসময় জাতীয় পার্টি করতেন। তার ভাই মুন্সী সাজ্জাদসহ অন্য ভাইয়েরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের এক আত্মীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। সেই সুযোগে তারা ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। দুদকের মামলায় তারা দুই ভাই কারাগারে ছিলেন। এখন মনে হয় জামিনে বেরিয়েছেন। তারা ঢাকায় থাকায় তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। ’
কাশিয়ানীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি করা মুন্সী সাজ্জাদ ও তার ভাইয়েরা গোপালগঞ্জের সাবেক একজন মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্য গড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঠিকাদারি শুরু করেন। ঠিকাদারির নামে তারা কোটি কোটি টাকা লুট করেছেন। এলাকার লোকজনের মধ্যেও তাদের বিষয়ে রয়েছে নানা কৌতূহল। তাদের হঠাৎ উত্থানে এলাকার বাসিন্দারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ’
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে জানান, স্থানীয়ভাবে ইাইব্রিড আওয়ামী লীগ হিসেবে পরিচিত ঝন্টু মুন্সী, মিন্টু মুন্সী, পিন্টু মুন্সী ও নান্টু মুন্সীর নামে এলাকায় অভিযোগের শেষ নেই। একসময় হত্যা মামলার আসামি ছিলেন পিন্টু মুন্সী। মুন্সী ফররুখ হোসাইন ওরফে মিন্টু মুন্সী আগে জাতীয় পার্টি করলেও বিএনপির আমলে বিএনপি করতেন এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগ। তিনি আবার কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। হোসাইন ওরফে পিন্টু মুন্সী এখনো কেন্দ্রীয় বিএনপির কমিটিতে আছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চার ভাইয়ের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি হয়েছে। কাশিয়ানী সদরে তাদের আলিশান বাড়ি, গ্রামের বাড়িতে বিপুল সম্পত্তি ও ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট এবং গাড়ির মালিক হয়েছেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষক আবজালের মতো অনেক বাড়ি, গাড়ি ও অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন সাজ্জাদ হোসাইন ওরফে ঝন্টু মুন্সী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন নিজের ভাই, ভগ্নিপতি ও আত্মীয়দের নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ঠিকাদারি শুরু করেন। সরঞ্জাম সরবরাহ না করে বিল তুলে নেওয়া, নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ ও ৪০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে পণ্য সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে মুন্সী সাজ্জাদ ও তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে।
দুদকের সুপারিশের পর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিম্নমানের এবং অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের অভিযোগ মুন্সী ফররুখ হোসাইন, মুন্সী হোসাইন, মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন ও আবদুল্লাহ আল মামুনের দুটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে মুন্সী ফররুখ হোসাইনের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ ও আবদুল্লাহ আল মামুনের অনিক ট্রেডার্স।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধভাবে প্রাক্কলন ব্যতীত উচ্চমূল্যে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকার সুযোগে নিজের ভাই ও ভগ্নিপতির নামে অন্তত ৫টি কোম্পানি খোলেন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুন্সী সাজ্জাদের তিন ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। তার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। তাদের এই চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। ঠিকাদারদের কারও কারও নাগাল পেলেও তাদের নেপথ্যে যারা থাকেন, তাদের প্রমাণের অভাবে ধরা মুশকিল হয়ে যায়। দুদকের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরনো দুর্নীতির মামলার তদন্ত অত্যন্ত কঠিন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাওয়া যায় না। তারা মুন্সী সাজ্জাদ পরিবারের নামে-বেনামে কী কী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে তারা কী কী কাজ পেয়েছেন তার একটি বিবরণ নেওয়ার চেষ্টা