করোনায় ভালো নেই কালকিনির মৃৎশিল্পীরা।

 প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২১, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন   |   লাইফস্টাইল




রিপোর্টঃ শেখ লিয়াকত আহম্মেদ। 


মৃৎশিল্প দেশের একটি অতি প্রাচীন শিল্প। আবহমান বাংলায় এই মৃৎশিল্পের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে কুমার বা কৃম্ভকার।এক সময়ে গ্রামের মানুষ মাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, বাসন, কলস, বদনা, মটকাসহ বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করতেন গৃহস্থালির কাজে। প্রাচীন কাল থেকেই এই শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দু সম্প্রদায়ের পাল বর্ণের লোকেরা।


পাল সম্প্রদায় মাটি দিয়ে সুনিপূন হাতে তৈজসপত্র তৈরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। যারা এই পেশার সাথে আছেন তাদের মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে করোনা। দিনের পর দিন লকডাউন, কঠোর লকডাউন থাকার কারনে তাদের কষ্টার্জাতি তৈজসপত্র অবিক্রিত রয়ে যাচ্ছে ফলে দীর্ঘ হচ্ছে এনজিওর লোনের কিস্তির বকেয়া। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে তাদের দিন কাটছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যে এই জনগোষ্ঠির নেই কোন সরকারি সহযোগীতা। সব মিলিয়ে বড় কষ্টে দিনাতিপাত করছে কুমার সম্প্রদায়ের লোকাজন।


কালকিনি পালপাড়ায় মৃৎশিল্প নয়ন পাল বলেন, মাটির হাঁড়ি পাতিল এখন আর চলে না। আমাদের অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পরেছে। এই পালপাড়ায় আগে মাটির হাঁড়ি পাতিল বানানোর অনেকগুলো চাকা ছিলো এখন আমার একটি মাত্র চাকা আছে বাকি গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যা বানাই তার দামও আগের মতো পাইনা তারপরে আবার করোনা, লকডাউন। করোনার কঠোর লকডাউনের কারণে মেলা, উৎসব বন্ধ থাকায় তাদের উৎপাদিত পণ্য বেচা-কেনা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকটে রয়েছি আমরা।সরকারে আর্থিক সহায়তা না পেলে পথে বসার উপক্রম হয়েছে আমাদের। 


প্রবীণ মৃৎশিল্পি নির্মল পাল বলেন, এক সময় ব্যাপক হারে এসব পণ্য সুনিপুণ হাতে তৈরি হতো আমাদের কুমারপল্লীতে। কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির তৈরি এসব পণ্য। নতুন প্রজন্ম কেউ আর এই পেশায় আসতে চায় না। আমরা কয়েকজন এখনও এ পেশাকে ধরে রেখেছি। কিন্তু করোনার কারনে আমাদের এই মাটির পণ্যগুলো কিনতে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। যার কারনে আমাদের অনেক লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এখন নূন আন্তে পান্তা ফুরানোর অবস্থা আমাদের। এমনবস্থায় সরকারের অনুদান ছাড়া এই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সরকারের অনুদানের দাবী করেন তিনি। 


এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে কালকিনি পৌর সভার মেয়র এস এম হানিফ বলেন, শুধু পাল সম্প্রদায় নায়, করোনা সংক্রামন বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের সরকার খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে। কিছুদিন আগে পৌর সভার ইজিবাইক, ভ্যান, মাহিন্দ্র শ্রমিকদের দশ কেজি করে শাত মেট্রিকটন চাল দিয়েছি। 


কঠোর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষদের আরও খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। এরই অংশ হিসাবে পৌর সভার  ৪,৬২১ জন কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষদের দশ কেজি করে চাল দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। খুব শিগ্রই এই খাদ্য সহায়তায় দেয়া হবে, এর মধ্য চায়ের দোকানদার, পাল সম্প্রদায়ও রয়েছে বলে জানান তিনি। 

লাইফস্টাইল এর আরও খবর: