বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জাইকার যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি এডুকেশন সিমুলেটর চালু: সড়ক নিরাপত্তায় নতুন মাইলফলক

 প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০৭:২২ অপরাহ্ন   |   জাতীয়



মনা নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

ঢাকার সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং জাইকার যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রকল্প (ডিআরএসপি)-এর আওতায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে অবস্থিত ডিএমপি ট্রেনিং একাডেমিতে একটি অত্যাধুনিক ট্রাফিক সেফটি এডুকেশন সেন্টার (টিএসইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই কেন্দ্রে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি ট্রাফিক সেফটি এডুকেশন সিমুলেটর চালু করা হয়েছে, যা তরুণ প্রজন্মকে সড়ক নিরাপত্তা ও সড়ক ব্যবহারে দায়িত্বশীল হওয়ার শিক্ষা দেবে।


২০২১ সাল হতে জাইকা ডিআরএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে ডিএমপির সঙ্গে কাজ করে আসছে। এই পাইলট প্রকল্পটি শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ম, নিরাপত্তা অনুশীলন এবং দায়িত্বশীল সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। জাপানের ট্রাফিক সেফটি এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন (জাট্রাস), যারা জাপানে ট্রাফিক নিরাপত্তা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, ঢাকার জন্য এই বিশেষ সিমুলেটর তৈরি করেছে। গত ১ জুন ২০২৫ খ্রি. তারিখে এই সিমুলেটর ডিভাইসগুলো উক্ত কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে।


এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ডিএমপির ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট এবং কনস্টেবল পদমর্যাদার ১৩ জন কর্মকর্তা জাট্রাস বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সিমুলেটর পরিচালনা ও ব্যবহারের ওপর দুই ঘণ্টার বিশেষায়িত হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কাছে ট্রাফিক নিরাপত্তা শিক্ষা কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়া।


আজ বুধবার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক - অ্যাডমিন, প্ল্যানিং এবং রিসার্স) মোঃ আনিসুর রহমান, ডিআরএসপি প্রকল্পের লিডার আসাদা এবং জাইকার বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা টিএসইসি পরিদর্শন করেন। তারা সিমুলেটরটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরীক্ষামূলকভাবে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিছু শিশু এই সিমুলেটর ব্যবহার করে তাদের উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করেছে।


যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সিমুলেটর চালু হওয়ায় আমরা গর্বিত। এটি সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ট্রাফিক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধিতে একটি কার্যকর হাতিয়ার হবে। ভবিষ্যতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এমন কেন্দ্র সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।


ঈদের ছুটির পর ট্রাফিক সেফটি এডুকেশন সেন্টারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। এরপর এই সিমুলেটরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। ডিএমপি আশা করছে, জাইকার সহযোগিতায় এই কেন্দ্র তরুণ সড়ক ব্যবহারকারীদের ট্রাফিক নিয়ম ও নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


এছাড়া, গত মে মাসে ডিআরএসপি আরেকটি পাইলট প্রকল্প সম্পন্ন করেছে যার মাধ্যমে ট্রাফিক লাইট ব্যবহার করে নিরাপদ পথচারী পারাপারকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ডিএমপি বর্তমানে এই ট্রাফিক লাইটগুলো গ্রহণ করছে এবং পথচারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এগুলো স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।


এই উদ্যোগ ঢাকার সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে যা ভবিষ্যতে আরও নিরাপদ ও সচেতন নগরী গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

জাতীয় এর আরও খবর: