ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়ি-দোকান সব বিক্রি করে দিয়েছে মায়ের চিকিৎসার জন্য।

 প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ





ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিনিধিঃ হাসিনুজ্জামান মিন্টুঃ


ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসেন ও ফাতেমা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রাজু সবার ছোট। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে রোগে ভোগার পর ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তার বাবা মারা যান।


রাজু ইসলামের স্বজনরা জানান, রাজুর বাবা বেঁচে থাকতে তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ক্যান্সারের সঙ্গে শরীরে যুক্ত হয় ডায়াবেটিকসসহ আরও নানান রোগ। মায়ের চিকিৎসা খরচ যোগাতে রাজু তাদের আশ্রমপাড়া ও পরিষদ পাড়া এলাকার দুইটি বাড়ি ও একটি দোকান বিক্রি করে দেন। বাড়ি ঘর বিক্রি পর রাজু তার মাকে নিয়ে সালন্দর ইউনিয়নের কচুবাড়ি এলাকায় মামার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। দীর্ঘদিন মামা বাড়িতে থাকার পর তার মামারা জমি-জায়গা নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে রাজু তার অসুস্থ মা-স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। বর্তমানে অসুস্থ মাকে নিয়ে সে তার শ্বশুরবাড়ির একটি ভাঙা বাড়িতে কোনমতো কষ্টে দিনযাপন করছেন। শহরের এক কাপড়ের দোকানে কাজ করে যা পারিশ্রমিক পান তা দিয়েই মায়ের চিকিৎসা ও তিন সন্তানের পড়াশোনা ও সংসারের বোঝা বইছেন। এখন মায়ের চিকিৎসা করানোর মতো কানাকড়িও তার কাছে নেই। আর ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে দরকার একসঙ্গে অনেক টাকা। তাই উপায় না পেয়ে তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।


প্রতিবেশী মাসুদ বলেন, রাজু তার মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজের সুখকে বিক্রি করে দিয়েছে। মাসে দুইবার সে তার মাকে রংপুরে নিয়ে যায়। ছেলেটা নিঃস্ব হয়ে গেছে। বাড়িঘর যা আছে সবই বিক্রি করে দিছে। 


প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ সুমন ও হাজেরা বেগম  বলেন, রাজু তার মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে একবারেই পথে বসে গেছে। রাজুদের এক সময় অনেক কিছুই ছিল। ঠাকুরগাঁও শহরের বাড়ি-দোকান সব বিক্রি করে দিয়েছে মায়ের চিকিৎসার জন্য। তারপরেও মাকে সে সুস্থ করে তুলতে পারেনি। তবে নিজের সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করছে। বর্তমানে রাজু অসহায় হয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে থাকে। আমরা প্রতিবেশীরা যতটুকু পারি সাহায্য করছি। কিন্তু আমাদের এই সাহায্যে তো আর তার মায়ের চিকিৎসা হবে না। তাই বিত্তবান যারা আছেন তারা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে রাজু তার মাকে সুস্থ করে তুলতে পারবে।


হাবিব নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য মালিক থেকে রাজু এখন কর্মচারী হয়েছে। এলাকা থেকেও সাহায্য তুলেছে। আমরা বেশ কয়েকবার সাহায্য করেছি। সরকারের পক্ষে বা সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আশা করা যায় রাজু তার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে।


রাজু ইসলাম বলেন, আমার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ, প্রতিদিন ৫০০টাকার ওষুধ লাগে। রংপুরে যেতে লাগে মাসে দুইবার। খরচ যোগাতে না পেরে ঘরবাড়ি দোকান সব বিক্রি করে দিয়েছি। শ্বশুরের জমিতে ঘর তুলে মা-স্ত্রী ও  তিন সন্তানকে নিয়ে আছি। অন্যের দোকানে কাজ করে মাসে যা বেতন পাই তা দিয়েই চলে আমার সংসার। সমাজের বিত্তবানরা যদি আমার মায়ের জন্য সহযোগিতা করেন তাদের কাছে চির ঋণী থাকব।


এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  চিকিৎসার জন্য আমার কাছে কেউ আসেনি। যদি রাজু বা তার পরিবারের লোকজন আবেদন করে তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে সাহায্য করা হবে।

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: