সিরাজগন্জের রায়গঞ্জে কলেজ খুলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ।

সিরাজগন্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের রায়গন্জে
কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের জাল-জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দৈবগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাই স্কুল এন্ড বিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এতে কয়েক বছর ধরে পুষে রাখা স্বপ্ন ভঙ্গ হলো ৭ শিক্ষক এবং কয়েক কর্মচারীর। যদিও প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার সময় প্রত্যেকে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা গুনে পেয়েছিল ভুয়া নিয়োগ। এমপিওভুক্তির আশায় তারা এই দীর্ঘসময় প্রতিষ্ঠানকে তিলে তিলে গড়ে তুললেও এমপিও হওয়ার পরই প্রতিষ্ঠাতার কুচক্রে অন্ধকারে ফেলে দেয়া হয় এই সব শিক্ষকদের।
যে সময় বেতনের টাকা পেয়ে আনন্দ করার কথা ঠিক সেই সময় আরও অতিরিক্ত টাকা দিতে না পেরে চাকরি হারাচ্ছেন তারা। অতিরিক্ত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পুরাতন শিক্ষক ও কর্মচারিদের সরিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নতুনদের নিয়োগ দিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলাম।
এমন ঘটনা ঘটেছে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রম্মগাছা ইউনিয়নের দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাই স্কুল এন্ড বিএম কলেজে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত ঘোষণার মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে পূর্বের নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারিদের নিকট থেকে পুনরায় ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকা দিতে রাজি না হওয়া শিক্ষকদের পূর্বের দেয়া প্রত্যেকের ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর রেহেন্নুমা তারান্নুম নামক এক ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়ে অনুলিপি প্রেরণ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক, র্যাব সদর দফতর, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এবং জেলা শিক্ষা অফিসে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদ্য এমপিওভুক্ত হওয়া দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাই স্কুল এন্ড বিএম কলেজে (কোড নং- ২৫১৩৩) ভুয়া শিক্ষক নিয়োগে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলাম। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির পরে পুরানো শিক্ষকদের নিকট নতুন করে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে নিজ পরিবার ও বেশী অর্থ দেয়া লোকদের নিয়োগ চূড়ান্ত করার পায়তারা করছেন শহিদুল ইসলাম। আর এই তালিকায় রয়েছে তার মেয়ের জামাই, ছেলে, ভাতিজা ও খালাতু ভাইসহ নিকট আত্নীয়রা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপরিস্থ কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গেলে বাইরে থেকে ভাড়া করে ছাত্র-ছাত্রী এনে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি দেখান প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর জেএসসি পরীক্ষার জন্য উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের এনে এ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে এমপিও করেন তিনি।
বোর্ডের নির্দেশ মানতেই ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে তালিকা প্রেরণ করেছে শহিদুল ইসলাম। তবে জাল জালিয়াতির অর্থ আদায় ও পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেনি অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলাম।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ২০১৫ সালে নিজ বাড়ির আঙিনায় বিএম কলেজটি প্রতিষ্ঠা করলেও কাগজ কলমে দেখানো হচ্ছে ২০১০ সালে স্থাপিত করা হয়েছে। এরপর চলতি বছরে কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেন তিনি। এ অবৈধ অর্থে ইতিমধ্যে তিনি উপজেলার অফিস পাড়ায় এক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা ক্রয় করেছেন। শুধু তাই নয় সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া শহরেও প্রায় দু’কোটি মূল্যের জায়গা কিনেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের জন্যই মূলত তিনি একই স্থানে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। উপজেলা থেকে ব্রম্মগাছা রোডের মোড়ে মোড়ে শহিদুল কামরুন্নাহার কলেজের পোস্টার দেখা গেলেও দেখা মেলেনি সেই প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা।
স্থানীয়রা দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাই স্কুল এন্ড বিএম কলেজটি ‘শহিদুল কলেজ’ নামেই চেনেন। এদিকে ঐ প্রতিষ্ঠানের ঠিক পশ্চিম পাশের ডি কে উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক হিসেবে এক যুগ ধরে এমপিও বেতন-ভাতা ভোগ করছে নীতিমতো। স্থানীয় এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলছেন ক্লাস না নিয়ে কিভাবে বেতন পায় আমার বুঝে আসেনা। নাম প্রকাশ না শর্তে ডিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, শহিদুল ইসলাম ডিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিও তালিকাভুক্ত ধর্ম শিক্ষক তবে তাকে পাঠদান করাতে হয়না।
এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, নিয়োগের নামে যে ভাবে শহিদুল বাণিজ্য করেছে তা মুখে বলার ভাষা নেই। প্রতিটি পদের জন্য প্রকাশ্যে কে কত টাকা দিতে পারবেন তা জানিয়ে দেয়া হয়। যে বেশি টাকা দিতে পারবেন তার নিয়োগ হবে। দুটি পদের জন্য দু’জন প্রায় ৪ বিঘা জমিই লিখে দিয়েছে। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের দাবি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক ।