স্থানীয় একটি চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি, বাধা দেওয়ায় মারপিট, জীবণনাশের হুমকি।

শেষ পর্ব
জিয়াউল ইসলাম ব্যুরো প্রধান খুলনাঃ
খুলনা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের একমাত্র বিশেষায়িত মীরেরডাঙ্গা বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি স্থানিয় একটি চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের অরক্ষিত ক্যাম্পাসে দিনের বেলায় চলছে লুটপাট, বখাটেদের আড্ড-গবাদী পশুর বিচরণ এবং সন্ধ্যা হলে বসে মাদকসেবীদের আসর। বাধা প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের কেউকেউ মারপিটের স্বীকার হয়েছে। কাউকে আবার দেওয়া হয়েছে জীবণনাশের হুমকি। অসহায়ের মতো প্রতিষ্ঠানটি বহুবার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলেও হয়নি কোন প্রতিকার বরং বেড়েছে আরো বেশি উৎপাত। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা বিরাজ করলেও আইন শৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ক্ষোভ।
হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশে চোখে পড়ে গেটের সামনেই ৫/৬জন যুবক আড্ডা দিচ্ছে। সিগারেট হাতে যুবকের কাছে জানতে চাইলাম তারা ভিতরে কেন এসেছে উত্তরে বল্ল আমাদের বাড়ী এখানে আমরা সব সময় এখানে এসে আড্ডা দেই। কয়েক গজ যাওয়ার পর চোখে পড়ে বাউন্ডারীর দিকে । গেটের পাশে অল্প কিছু অংশ কাটাতারের বেড়া ছাড়া সম্পুন্ন বাউন্ডারীর লোহার এ্যাংগেল ও তারকাটা কেটে নিয়েগেছে। হাসপাতাল ভবনের সামনে আসতে মনে হলো কোন পশু হাসপাতালে প্রবেশ করেছি। হাসপাতাল ভবনের সামনেই ৫/৬টি গরু বাধা ঘাষ খাচ্ছে। ঠিক সামনের আবাসিকের দিকে তাকিয়ে দেখাগেলো পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনের চতুর পাশে ঝোপঝাড় আর জঙ্গলে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম আবাসিকের পুরাতন জরাজীর্ণ প্রতিটি ভবন যেন ভুতুড়ে বাড়ীতে পরিনত হয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনের কয়েকটি ফ্লাটে জীবনের ঝুকি এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কয়েকজন স্টাফ বসবাস করছে। আবাসিকের প্রায় প্রতিটি ভবনের ফ্লাট গুলোর রুমের গ্রীল, জানালা, দরজা খুলে চুরি করে নিয়েগেছে। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ভবন গুলোর মধ্যে দু-একটি কক্ষের পরিবেশ দেখে মনে হলো এখানে প্রতিনিয়ত মাদকসেবীদের আসর বসে।
হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানায়, বসবাস অনুপযোগি পুরাতন ভবন গুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ভবন গুলোর গ্রীল, জানালা-দরজা এমন কি রাস্তার ইট গুলো দিনে দুপুরে খুলে নিয়ে যাচ্ছে। বাধা দেওয়ায় কেহকেহ হামলার স্বিকার হয়ে মার খেয়েছে এমনকি চোর ধরার অপরাধে কারও ঘরের জানালা খুলে নিয়ে গেছে। হাসপাতালের ভবনের সামনে রোগীদের স্বজনদের বসার জন্য একটি বেঞ্জ ছিল সম্প্রতি দিনের বেলায় সকলের সামনে দিয়ে সেটাও নিয়ে যায়। প্রতিনিয়ত হাসপাতালের লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি সম্পদ দিনে-দুপুরে লুটপাট করে নিয়ে যচ্ছে। কয়েকজনকে জীবণনাশের হুমকি দেওয়ায় জীবনের ঝুকি নিয়ে কেহ ভয়ে এগিয়ে আসছে না। বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, স্থানীয় সোহান, অন্তর, সজীব, চঞ্চল, আরমান, তুহিন, ইয়াসিন, হাসিব, রাকিবসহ ১০/১২ জনের একটি চক্র এই কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে যা প্রতিষ্ঠান এবং আইন শৃংখলা বাহিনী জানেন কিন্তু কোন ব্যবস্থা নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হাসপাতালের আইনশৃংখলা, মালামাল চুরি, হাসপাতালের অভ্যন্তরে চোরের উপদ্রব এবং নেশাখোরদের উপদ্রবের বিষয়টি অবহিত করে ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারী, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর খানজাহান আলী থানায় লিখিত দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে অবগত করার পর অজ্ঞাতকারণে এদের অত্যাচারের মার্তা আরো বেশি বেড়ে যায়।
হাসপাতাল সুত্রে জানাগেছে, হাসপাতালের চিকিৎসা তত্বাবধায়েকের নতুএক তলা বিশিষ্ট বাংলো দীর্ঘদিন যাবত বসবাসের অযোগ্য পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় বাংলোর গ্রীল, জানালা-দরজা এমনকি বাংলোর সামনের রাস্তার একটি অংশের ইট তুলে চুরি করে নিয়েগেছে। ডক্টরস কোয়ার্টারের ৫টি ইউনিট পুরাতন হওয়ায় বসবাস অনুপযোগি, নার্সিং কোয়াটারের ৩ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন এবং চতুর্থ শ্রেনীর ২টি ভবন মেরামত অযোগ্য পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আবাসিকের এ সকল ভবনের অধিকাংশ ফ্লাটের লোহার গ্রীল, জানালা-দরর্জা বহিরাগতরা চুরি করে নিয়েগেছে। এদেরকে হাতেহাতে ধরা হলে সিনিয়র স্টাফ নার্সের বাসার গ্রীল কেটে নিয়ে গেছে এবং বাড়াবাড়ী করলে জীবণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরিত্যাক্ত ভবনের কয়েকটি রুমের মধ্যের পরিবেশ পরিস্থিতি বলে এখানে প্রতিনিয়ত মাদকের আসর বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বিকার করেছে। হাসপাতালের একাধিক স্টাফ বলেন রাতে নয় দিনের বেলায়ও এখানে মাদক সেবন করা হয় কিন্তু চাকরী করতে এসে জীবণ চলে যাবে এই আশংকায় কেহ ভয়ে এগিয়ে আসছে না।
হাসপাতালের মঞ্জুরকৃত পদের সংখ্যা সর্বমোট ১শ ৮৪টি এর মধ্যে নিরাপত্তা গার্ড বা নৈশ প্রহরীর কোন পদ নাই। চতুর্থ শ্রেনীর যে সকল পদ আছে তার মধ্যে অফিস সহায়ক ২৪জন, কুক/মশালচী ৫জন এবং পরিছন্নকর্মী ১৫জনসহ সর্বমোট ৪৪ জনের মধ্যে ৩১জনই আউটসোর্সিং জনবল। হাসপাতালের প্রায় ৩ একর জমির কোটি কোটি টাকার সম্পদ নিরাপত্তা গার্ড/নৈশ প্রহরীর অভাবে অরক্ষিত থেকে কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে লুন্ঠিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত¡াবধায়ক ডা. মো. ইউনুস আলী বলেন, হাসপাতালে বহিরাগত অবাঞ্চিত জনতার অবাধ প্রবেশ বন্ধ করা প্রয়োজন। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হাসপাতালের আবাসিকের পরিত্যাক্ত ভবন গুলোর গ্রীল ও জানালা এবং বাউন্ডারীর এ্যাংগেল ও কাটা তার কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন কি রাস্তার ইট পর্যন্ত তুলে নিয়ে গেছে। আমাদের স্টাফরা কেহ বাধা দিলে তাদেরকে মারধর এবং জীবণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। হাসপাতালের মধ্যে মাদকসেবীদের অবাধে চলাফেরা এবং বখাটেদের আড্ডা দিতে দেখা যায়।একটি চক্র আছে যারা এ কাজ গুলো দিনের পর দিন করেই চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেহ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এ বিষয়ে গত চার বছরে থানায় একাধিকবার লিখিত দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন প্রতিকার হয় নাই।