মানবতার পথে, চলো একসাথে ''ইনসিগনিয়া ইংলিশ কেয়ার"

 প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২২, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ



মনা, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

মানবতার পথে,

          চলো একসাথে।

আহমেদ রাফিদ।। ৮ই জুন,২০২২।। “ছাত্র” শব্দটা হয়তো লিখতে দুই অক্ষরের বেশি লাগে না, তবে ছাত্ররা যে কতটা হৃদয়বান ও উদ্যোগী হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারই প্রমাণ দিলো ‘ভিশন অন এ মিশন’ নামের একটি সংগঠনের সেচ্ছাসেবীরা। সপ্তম শ্রেণী থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মিলিত উদ্যোগে সংগঠিত হয়েছে এই সংগঠনটি। ছোটো বড় সবাই কাজ করেছে গলায় গলা মিলিয়ে। সবার লক্ষ্য ছিলো সাধ্যমতো সবার মাঝে খুশি বিলিয়ে দেওয়া, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। ‘ইনসিগনিয়া ইংলিশ কেয়ার’ এর প্রতিষ্ঠাতা দয়াল চাকমা এর নেতৃত্বে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে পথচলা শুরু হয় ‘ভিশন অন এ মিশনে’ এর। সকলের সমবায়ে ৩১ শে মে, ২০২২ প্রথম মিটিংয়ে বসেন সবাই এবং পরবর্তী দিন ১লা জুন, ২০২২ সংগঠনটির পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়। সামনের কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরীব-দুঃখীদের মাঝে খাবার বিতরণের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয় এবারের প্রজেক্ট। ১৭ই জুন,২০২২ তারিখ ৬ টি দল গঠন করে বিভিন্ন মসজিদ থেকে সাহায্যের জন্য টাকা তোলা শুরু করার মধ্যে দিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। মহল্লার মহোদয়গণ ছাত্র-ছাত্রীদের মহৎ উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এরপর দিন থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে সাহায্য চাওয়া শুরু হয়। ২২শে জুন,২০২২ ৬ জনের মোট ৪ টি দল মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম ও ২য় ব্রাঞ্চের সামনে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া 'ইনসিগনিয়া ইংলিশ কেয়ার' এ একটি ডোনেশন বক্স রাখা যাতে নিয়মিত ডোনেশন কার্যক্রম চলতে থাকে। এসময় সর্বস্তরের মানুষ তাদের নিজ সাধ্যমতো সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেন। ছোটো-ছোটো ছেলে মেয়েরা, অভিভাবকবৃন্দ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ সাধ্য মতো সাহায্যে এগিয়ে আসে। এদিন আশানুরূপ সাহায্য পাওয়ায় সকলের মধ্যে উৎসাহ আরো বাড়তে থাকে এবং ২৩ শে জুন মোট ৪ জনের ২ টি দল মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল শাখায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়া একই সাথে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও ডোনেশন নেওয়া হচ্ছিল যার প্রচারণা চলছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরেরদিন ২৪শে জুন দুপুরে নামাজের পর ২ জন এককভাবে বেলতলা মসজিদের সামনে থেকে সাহায্য সংগ্রহ করে এবং সেখান থেকেও তারা ব্যাপকভাবে সাড়া পায়। পরবর্তী দিন 'ইনসিগনিয়া ইংলিশ কেয়ার' এর শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকবৃন্দ নিজ উদ্যোগে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করেন। ২৭ ও ২৮ জুন সর্বমোট ৯ জনের ৩ টি দল যথাক্রমে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শাখা, ভিকারুননিসা নুন স্কুলের আজিমপুর শাখা ও মিরপুর ক্যান্টমেন্ট পাবলিক হাই স্কুলের সামনে ডোনেশন সংগ্রহ করে। এছাড়া ২৯শে জুন মোট ৫ জনের ২ টি দল ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজের সামনে দাঁড়ায়। ৩০শে জুন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেণ্ডারি স্কুল, ভিকারুননিসা নুন স্কুলের ধানমণ্ডি শাখা এবং ধানমণ্ডি লেকের দর্শনার্থীদের থেকে সাহায্য সংগ্রহ করে সেচ্ছাসেবীরা। এতে বাংলাদেশ পুলিশের কিছু সদস্যও সাহায্য দান করেন। ১লা জুলাই রোজ শুক্রবার পবিত্র জুম্মার নামাজ এর পর সেচ্ছাসেবীরা বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ , বায়তুল মোকাররাম এর সামনে মুসল্লিদের থেকে এবং বিকালে জিয়া উদ্যানে দর্শনার্থীদের থেকে ফুলের বিনিময়ে সাহায্য সংগ্রহ করে। এতে একটি ফুলের বিনিময়ে দর্শনার্থীরা যে সাহায্য দান করেছেন, ফুলের দামটি বাদে বাকি সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে এই প্রজেক্টে। অবশেষে ২রা জুলাই ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীদের থেকে সাহায্য সংগ্রহের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সাহায্য সংগ্রহ সবসময়ে জন্যই চালু ছিলো। এছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শ্রেণীতে নিজ উদ্যোগেও কিছু সাহায্য সংগ্রহ করে এগিয়ে আসে। সকল সাহায্য একত্র করে ৪ই জুলাই সাহায্যের সামগ্রী ক্রয় করা হয়। সর্বমোট ২২০ কেজি চাল, ৫৫ কেজি ডাল, ৫৫ কেজি চিনি,৫৫ লিটার দুধ, ১১০ কেজি আলু, ১১০ প্যাকেট সেমাই এবং প্রায় ১৫০ কেজি মুরগি ক্রয় করা হয়। এতে করে সর্বমোট ১১০ জনের জন্য খাবার প্যাকেটজাত করা হয় যেখানে প্রতিট প্যাকেটে ২ কেজি চাল, আধা কেজি ডাল, আধা কেজি চিনি, আধা লিটার দুধ, ১কেজি আলু, ১ প্যাকেট সেমাই এবং প্রায় ১.৫ কেজি মুরগি দেওয়া হয়। ৫ তারিখ বিকাল থেকে প্যাকেটজাত শুরু হয় এবং ৬ তারিখে প্যাকেটজাত করা শেষ হয়।এর সাথে সাথে চলতে থাকে হতদরিদ্রের সন্ধান যাদের মুখে হাসিই ছিল সবার মূল উদ্দেশ্য। অবশেষে ৭ তারিখ দুপুর ৩ টা থেকে ‘ইনসিগনিয়া ইংলিশ কেয়ার’ এর সামনে সামগ্রী বিতরণ শুরু করেন 

‘ইনসিগনিয়া ইংলিশ কেয়ার’

পরিচালকঃ দয়াল চাকমা ও

ছাত্র-ছাত্রী দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন : তানভীর, সিয়াম, অর্ণব, জান্নাত, সোয়াইব, আন্নি, রাফিদ, মেজবাহ, লাবিব, সুমিষ্ট,সহ আর ও ছাত্র- ছাত্রী এবং দয়াল চাকমা এর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে সামগ্রী বিতরণের মূল কার্যক্রম। বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীরা সকলে মিলে শৃঙ্খলভাবে তাদের মাঝে বিতরণ করে। সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বিকাল ৫টা নাগাদ বিতরণ সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ভিশন অন এ মিশনের প্রথম প্রজেক্ট। মানবতার পথে চলার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটির সেচ্ছাসেবীরা এবং সামনে আরো বেশ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করছে সেচ্ছাসেবীরা।

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: