প্রসঙ্গ: হাইব্রিড, জাহিদুর রহমান

 প্রকাশ: ০৭ মে ২০২১, ০৮:০৭ অপরাহ্ন   |   রাজনীতি


প্রসঙ্গ: হাইব্রিড 
-----------------------
হাইব্রিড একটি ইংরেজি শব্দ। সমগ্র শিক্ষা জীবনের কোনো পর্যায়ে একাডেমিক্যালী এ শব্দটির সাথে  পরিচয় হয়েছিলো বলে মনে পড়েনা, কোনো পরীক্ষার উত্তর পত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করেছি বলেও মনে পড়েনা। তবে ধান গবেষণা কেন্দ্র হাইব্রিড ধান আবিস্কার করেছে এমনটা শুনেছিলাম। পরবর্তীতে দেখলাম হাইব্রিড ধান মাত্র ৯০দিনে কৃষকেরা ঘরে তুলছেন। অল্প সময়ের মধ্যে অল্প জমিতে যে ধান চাষ করে সহজেই কৃষকেরা তাদের গোলা ভরে ফেলতেন। জনবহুল এই দেশের জন্য কতো প্রয়োজনীয় এবং চমৎকার এক আবিষ্কার। 
সাইখ সিরাজের 
প্রচারণায় হাইব্রিড পেয়ারা- কাজী পেয়ারা নামে পরিচিতি পেল, আর মুরগী - পোল্ট্রি মুরগী হিসেবে। এগুলো হাইব্রিড হলেও এদের সাথে হাইব্রিড শব্দ ব্যবহার হতোনা।এমনকি হাইব্রিড ধানের  ক্ষেত্রেও ইরি, বিআর-২৮,২৯ ইত্যাদি সহ অন্যান্য সাইন্টিফিক নাম ব্যাবহার শুরু হলে এখান থেকেও হাইব্রিড শব্দ বহুল প্রচার পেলোনা। সুতরাং হাইব্রিড শব্দ বহুল ব্যবহৃত কোন শব্দ হিসেবে আমার সামান্য শব্দ ভান্ডারে ছিলোনা। 

২০১৫ সালের শেষের দিকে আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত উৎসব মূখর এ সম্মেলনে আমাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থেকে আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের   সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব প্রদান করেন। নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাননীয় সংসদ সদস্যসহ প্রয়োজনীয় ব্যক্তি বর্গের সাথে পরামর্শ করে নবীন প্রবীনদের সমন্বয় করে একটি কমিটি গঠন করে তা অনুমোদনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নিকট প্রেরণ করার পর হতে হাইব্রিড শব্দ আবার  নতুন করে  আমার সামনে আসে। ওই সময় কয়েক মাসে কতো হাজারবার এ শব্দ ব্যবহার করে কিছু মানুষের আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখনীর ঝড় দেখেছি! পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, বিভিন্ন জেলা উপজেলার সম্মেলন, সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন  যতোই হচ্ছিল ততোই যেন এ শব্দ বারবার সামনে আসছিলো। 
 যখন দেখলাম নব্বই শতাংশের বেশি আওয়ামী সমর্থকের আমাদের উপজেলায় আওয়ামী লীগের কমিটিতে কিছু মানুষ তাদের দৃষ্টিতে হাইব্রিড ছাড়া  কিছু দেখেন না। তখন থেকে হাইব্রিড শব্দটি সম্পর্কে আর একটু জানতে ইচ্ছে হলো।

হাইব্রিড শব্দ বাংলা ভাষায় নতুন। আরও অনেক শব্দের মতোই ইংরেজি থেকে এ শব্দের আমদানি। নানান জাতির  মানুষ আর তাদের ভাষা কে আমরা বরাবরই আপন করে নিয়েছি। নানান ভাষার নানান শব্দ  স্থান পেয়েছে আমাদের শব্দকোষে। হাইব্রিড ও তেমনি ইংরেজি থেকে বাংলা শব্দকোষে মিশে যাওয়া একটি শব্দ।

হাইব্রিড ধান ছাড়া আমাদের শস্য ভান্ডার পূর্ণ হয়না; হাইব্রিড মাছ থেকে পেয়ার-কলা পর্যন্ত  আমাদের খাদ্য তালিকায়, কোরবানির পশু ক্রয়ে হাইব্রিড এভোয়েড করা খুবই দুস্কর। এমনকি অন্যান্য হাইব্রিড খাবারও আমরা কম খাইনা। তারপরও হাইব্রিড শব্দের সাথে ইদানীং আমাদের কেমন যেন বিতর্কের সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। বস্তুত শব্দটির সাথে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা তাকে এভাবে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
বছর দু'এক আগে নাটোর যুবলীগের এক নেতা " হাইব্রিড, কাউয়া লীগ ও ভাই লীগে"র বিরুদ্ধে নাটোর শহরে অসংখ্য পোস্টার সেটে দিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের বারবার বলেছেন "হাইব্রিড নেতায় ভরে গেছে দেশ।" রাজনীতিতে কাউয়া শব্দ ব্যবহার করে তিনি এ শব্দটাকেও জনপ্রিয় করে তুলেছেন। তাই হাইব্রিড শব্দ বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দের মর্যাদায় পৌছেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল এবং বাংলাদেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দল। এ দলটির তৃনমুল সবচেয়ে শক্তিশালী এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি ইতোমধ্যে একটানা একযুগ অতিক্রম করেছে।  দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলটি নেগেটিভ রাজনীতির বেড়াজালে আটকে পড়ে,  যুদ্ধাপরাধীদের সাথে হাত মিলিয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বে ভুগছে। এ সুযোগে বারবার মৌলবাদী শক্তি বিভিন্ন চেহারায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তারপরও জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সমস্ত কিছু মোকাবেলা করে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। একটানা রাস্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দলের ভিতরে ও বাইরে থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে যাচ্ছে, ক্ষমতার হালুয়া রুটির লোভে কিছু অনুপ্রবেশকারী দলে প্রবেশ করে স্বার্থ হাসিলের অপতৎপরতা চালাচ্ছে,  বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে।  এসব কারনে  তৃনমূল নির্ভর এ দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা অনেকটা স্থবির নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। যার কারণে দলের সাধারণ সম্পাদককে হাইব্রিড আর কাউয়া তত্ব আক্ষেপ করে আবিষ্কার করতে হয়, এর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কমিটি গঠন করতে হয়।

আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে কোনো দল একটানা রাস্ট্র ক্ষমতায় থাকলে স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর সৃষ্টি হওয়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাই বলে আমাদের উপজেলার ওই সমস্ত মানুষের হিসাব মতো আওয়ামী লীগের  পদ-পদবী ও দায়িত্বে থাকা সবাই হাইব্রিড হয়ে গেছেন, সকল ত্যাগী নেতা সম্মান বঞ্চিত হচ্ছেন একথা বলা সমীচীন হবেনা। জননেত্রীর সাথে আদর্শিক ত্যাগী নেতাকর্মীরা আছেন বলেই জননেত্রী আমাদের উন্নত সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতে পারছেন ; যদিও অনেক ক্ষেত্রেই জননেত্রীকে একাই যুদ্ধ করতে হয়। একজন উপমন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার ব্যক্তি যে সকল সমস্যার সমাধান অনায়াসে করতে পারেন - সেখানেও জননেত্রীকে এগিয়ে আসতে হয়। জননেত্রী সেগুলো সামাল দিয়েই যাচ্ছেন, তিনি পারেন কারন তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। আর তাই বাংলার মানুষ অবশ্যই তার উপরেই আস্থা রাখতে চায়। 
আমি মনে করিনা হাইব্রিড শব্দ বা কাউয়া শব্দকে এমনিতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামনে এনেছেন। এনেছেন এবং আনতে বাধ্য হয়েছেন। কারন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, তৈরি হয়েছে তেলবাজ গোষ্ঠী, তৈরি হয়েছে অনুপ্রবেশকারী গোষ্ঠী ইত্যাদি।  যার নিদর্শন হিসেবে সাহেদ গাউচসহ অনেককই আমরা দেখতে পাই। 
দায়িত্বে থাকা ক্ষমতাশালী নেতাদের সাথে তৃনমুলের সম্পর্কে ভাটা পড়ছে বলে অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়। কারন সাম্প্রতিক সময়ে উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী যখন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত, যখন আমার নেত্রীকে দিচ্ছে গালি, খোন্তার আঘাতে জাতির পিতার ম্যুলারকে করছে ক্ষতবিক্ষত, আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে সরকারি অফিসে, মুক্তি যোদ্ধা কমপ্লেক্সে, মুক্তি যোদ্ধাদের ঘরবাড়িতে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ীতে, তখন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরবতা আমাদের অবাক করেছে, অবাক করেছে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের অপ্রতুল প্রতিবাদ দেখে। বরং অনেক নেতাকর্মীদের দেখেছি নিজের অথবা পছন্দের নেতার ছবি প্রচারণায় ব্যস্ত। যারা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অথবা অন্য মাধ্যমে এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করেছেন তাদেরকে হজম করতে হয়েছে ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সমর্থকদের অশ্রাব্য নোংরা ভাষার গালি।
আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যে আওয়ামী লীগ আজ দেশকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে,  সে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এমন নিরবতা, চুপসে থাকা কোনো শুভ লক্ষন নয়।
এসব কারনেই সম্ভবত হাইব্রিড আর কাউয়াতত্ব আজ বড়ই জনপ্রিয়। 
অবশ্যই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলে আদর্শিক কর্মীরা এখনো আছেন। আশা করবো
বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের যে যুদ্ধ বঙ্গবন্ধু কন্যা করে যাচ্ছেন,  জননেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সকল আদর্শিক এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা এ যুদ্ধে সোচ্চার ও সামিল হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন।

পুনশ্চঃ বাঙালী জাতির চেতনাকে যে আওয়ামী লীগ ধারণ করে, যার নেতা বঙ্গবন্ধু,  বিশালতাই যার ও যে দলের বিশেষত্ব, তারা কখনও বদ্ধ দুয়ার নীতির মধ্যে আবদ্ধ থাকেনি। নানা মতের, ধর্মের আর চেতনার স্থান হয়েছে এ দলে। এক সময়ের রাশিয়া পন্থি বাম রাজনীতির ধারকেরা যেমন এ দলকে সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি ভুল বুঝে ফিরে আসা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরাও ফিরে এসে এ দলে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। এমনকি এক এগারোর বিভ্রান্তদের জন্যও দলের দরজা বন্ধ করেননি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। 
এতে দোষের কিছু নেই,  কারণ এর মুলে ছিল একটি বিষয়, তা হলো- স্বাধীনতার চেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত কারও জয়াগা হয়নি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে, আশাকরি কস্মীনকালেও তা হবেনা। এটাই আওয়ামী লীগের আদর্শ। এখন শুধু সুবিধাবাদী, অনুপ্রবেশকারী ও তেলবাজ গোষ্ঠীকে সাংগঠনিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই জননেত্রীর এ যুদ্ধে জয় হবে, আর সতের কোটি মানুষের প্রত্যাশা ও বোধকরি তা-ই। জননেত্রীর হাত ধরেই বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ।

# জাহিদুর রহমান 
প্রচার সম্পাদক 
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। 
গোপালগঞ্জ।

রাজনীতি এর আরও খবর: