রায়পুরে ৩ টি ইউনিয়নে আবারো অস্বাভাবিক জোয়ারের হানা: ১৫ গ্রাম প্লাবিত।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি শরিফ হোসেন
পনের দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো অস্বাভাবিক জোয়ারে আঘাত হেনেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ১৫ টি গ্রামে।জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে মানুষের ঘর-বাড়ীতে। গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টির পানি আর মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে স্কুল মাদ্রাসা,পুকুরের মাছ ও কৃষকের ফসলি জমি। প্রতি নিয়তই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রায়পুর উপজেলার ২ নং উত্তর চরবংশি ইউনিয়নের,চর ইন্দুরিয়া, চর ঘাসিয়া, চর বংশী,পুড়ান বেড়ি,আলতাফ মাষ্টার মাছ ঘাট, তালতলা,মেঘনা বাজার, ও ৮ নং দক্ষিণ চরবংশি ইউনিয়নের, হাজিমারা,মোল্লার হাট,মিয়ার হাট, পানির ঘাট এবং ১ নং উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের সাজু মোল্লার ঘাট, জালিয়ার চর সহ প্রায় সকল এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ঘরের খাট কিংবা চৌকিতে। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে রান্না ঘরের চুলা।
ভুক্তভোগীরা মেঘনায় বেড়ীবাঁধ না থাকাকে দায়ী করেছেন। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় দ্রুত বেড়ীবাঁধ দেয়ার দাবি জানান। অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার প্রায় ১৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ নদীর পানি৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলসহ গবাধিপশু, মুরগির পোল্ট্রি খামার ও শতাধিক মাছের ঘের ক্ষতির শিকার হয়েছে। গত দিনের টানা বৃষ্টি ও আচমকা মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়ি বাঁধ না থাকায় জোয়ারে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়দের।
সূত্র জানা যায়, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে বেড়িবাধ। তাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে এসব এলাকা। হঠাৎ গত ৩ দিনের বৃষ্টি আট মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়ে যায়। এসময় তীব্র বাতাস ও স্রোতে নদীর পানি হু-হু করে ঢুকে পড়ে উপকূল এলাকায়। মুহূর্তেই বিস্তীর্ণ জনপদ পানির স্রোতে ভেসে যায়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়,চর বংশী,চর ইন্দুরিয়া,চর ঘাসিয়া,পুড়ান বেড়ি,আলতাফ মাষ্টার মাছ ঘাট, তালতলা বাজার, মেঘনা বাজার,সাজু মোল্লার ঘাট, জালিয়ার চর, হাজিমারা,মোল্লার হাট,মিয়ার হাট,পানিরঘাট এর গ্রামসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীর তীর থেকে এসব এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে নদী সংযুক্ত খাল, পুকুর, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়-প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে। শত শত বসতঘরে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন মালামাল। এতে মেঘনা উপকূলীয় মানুষগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কর্মকর্তা জানান, মেঘনার অস্বাভাকি জোয়ারে রায়পুর উপজেলায় প্রায় ৩ টি ইউনিয়ন আউশ, রোপা আমন, বোনা আমন ও শাকসবজিসহ প্রায় ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে রোপা আমনের ৩৭৫ হেক্টর জমির বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতির পরিমান সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যা মোকাবেলায় জিআর নগদ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জিআর চাল ৩৫০ টন, গোখাদ্যের জন্য ৬ লক্ষ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লক্ষ টাকা, শুকনা খাবার ২ হাজার প্যাকেট মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়াও কবলিত এলাকর মানুষের আশ্রয়ের জন্য জেলার মোট ৫ উপজেলায় ১০১টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা রয়েছে।
২ নং উত্তর চরবংশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হোসেন হাওলাদার ও ২ নং দক্ষিণ চরবংশি ইউপি চেয়ারম্যান জনাব মোঃ মিন্টু ফরাজী এবং ১ নং উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, তাদের ইউনিয়ন গুলোতে জোয়ারের কারণে বেশ কিছু কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি ও সড়কের গাছসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোতে শুকনা খাবারসহ সহ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিন চৌধুরী জানান, জোয়ারের পানিতে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ২৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।বরাদ্ধ পেলে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করা হবে।