পেট্রাপোলে স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশিদের ঢুকতে বাধা

 প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ০২:১২ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষা



মনা,বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ভারতে ঢুকতে দিচ্ছে না পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ


বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশিদের স্টুডেন্ট ভিসায় ভারত যাতায়াত এখনো বন্ধ রয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্টুডেন্ট ভিসাধারী কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ভারতে ঢুকতে দিচ্ছে না পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এতে করে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ায় শঙ্কায় রয়েছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।


এদিকে, কোনো বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীকে পেট্রাপোল হয়ে ভারতে ঢুকতে না দিলেও বাংলাদেশে আসতে পারছেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।


বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে (২২-২৮ মার্চ) বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বিভিন্ন ভিসায় ১০ হাজার ৩৮০ জন পাসপোর্টযাত্রী দু‘দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ হাজার ২৬৭ জন বাংলাদেশি ও ১ হাজার ৯৬৪ জন ভারতীয়। আর বাংলাদেশে এসেছেন ৩ হাজার ২৮৮ জন বাংলাদেশি ও ১ হাজার ৮৫৬ জন ভারতীয়। ভারত থেকে আসাদের মধ্যে অধিকাংশই স্টুডেন্ট ভিসায়।


আরও জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ১৮ থেকে ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেন। এ যাত্রীদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। যারা দুই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনা করেন।


২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে যার যার দেশে ফেরেন। বর্তমানে সংক্রমণ কমে এলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এতে কয়েক মাস আগে থেকেই ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। তবে সব ঠিকঠাক থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের বাধায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সড়ক পথে ভারতে যেতে পারছেন না। তাদেরকে আকাশ পথে যেতে বলা হচ্ছে। যা সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের কাছে কষ্টসাধ্য।


ভারতের দার্জিলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তার পরীক্ষা ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। তিনি এখন ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন মেডিকেল, বিজনেস, এমপ্লয়ারসহ বিভিন্ন ভিসায় ভারতে লোক যাতায়াত করছে অথচ আমরা যেতে পারছি না। আমাদের তো খুবই জরুরি। সময়মতো যেতে না পারলে আবার একটি বছর পিছিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। আমাদের পরীক্ষার উপযুক্ত প্রমাণ দিলেও আমরা যেতে পারছি না।


ভারতের কাশ্মীরে পড়ুয়া বাংলাদেশি ছাত্র সৌরভ বণিক ও অভিষেক বড়ুয়া জানান, তারা ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশে আসেন। এরপর ডিসেম্বরের পরে যখন তারা পড়াশোনার জন্য ছুটি কাটিয়ে ভারতে যেতে চান তখন বিপাকে পড়েন ইমিগ্রেশনে।


বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত অনুমতি না দিলে তারা এসব স্টুডেন্ট ভিসার ছাত্রছাত্রীদের পাসপোর্টে এন্ট্রি সিল মারতে পারবেন না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের পড়াশোনা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। এরই মধ্যে তাদের পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেছে।


ভারতের কলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আলামিন হোসেন বলেন, পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণের রুট সব ঠিক থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন আমাকে ভারতে ঢুকতে দেয়নি। এপ্রিলে পরীক্ষা। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।


দিল্লীর সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উর্মী বলেন, ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই বাংলাদেশে এসে ক্লাস শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভারতে যেতে পারছে না। ভারত সরকারের কাছে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করছি।


বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ রাজু বলেন, ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কোনো স্টুডেন্ট এ পথে ভারতে যেন না পাঠানো হয়। প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী চেকপোস্টে আসছেন। কিন্তু তাদের ভারতীয় ইমিগ্রেশন গ্রহণ করছে না। তবে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অনেক আগে থেকে স্বাভাবিক আসা যাওয়া করতে পারছিলেন।


তিনি আরও বলেন, এটা ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। ভারত তাদের ইমিগ্রেশনে অনুমতি না দিলে আমরা ছাড়তে পারবো না। কারণ আমরা বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেও ভারত এসব শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দেবে। তবে জরুরি ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় দূতাবাস থেকে অনুমতি নেওয়া বা ঢাকা থেকে বিমানে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।


বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের বাধায় স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে এসে ভারতে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ এবং ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি থাকলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের গ্রহণ করতে নারাজ।

শিক্ষা এর আরও খবর: