৯ জুন ২০২১, রোজ বুধবার দুপুর ১.৩০ থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো চাইল্ড পার্লামেন্ট এর ১৯তম অধিবেশন।

 প্রকাশ: ১২ জুন ২০২১, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষা


লিটন ইসলাম ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি


এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আমরা কেমন আছি: করোনাকালীন সময়ে শিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা’। এবারের চাইল্ড পার্লামেন্টের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সাঈদ মো গোলাম ফারুক, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওরলা মারফি, আবদুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক, শিশু অধিকার সুশাসন ও শিশু সুরক্ষা, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নিনা গো-স্বামী এবং ওয়াই মুভস প্রজেক্টের সিনিয়র ম্যানেজার রাজিয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ জুন ২০২১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া ১৯তম চাইল্ড পার্লামেন্টের মূল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় গত ৯ জুন, যেখানে সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে ১২৮ জন শিশু সংসদ সদস্য এবং ১৬টি জেলার ১৬টি সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক অঞ্চলের শিশুরা অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলো তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে। ভয়াবহ করোনাকালীন সময়ে অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় শিশুর শারিরীক ও প্রজনন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুরক্ষা, মানসিক বিকাশ, অপুষ্টিহীনতা ও শিশু অধিকার মারাতœকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে এ বছর চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্যগণ সামনে রেখে  ইয়েস বাংলাদেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ৭৫৭ জন শিশুদের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। যেখানে উঠে আসে গত এক বছরের শিশু অধিকার পরিস্থিতির চিত্র।  

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ড. দীপু মনি, এমপি, অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। সেইসাথে তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের আতœত্যাগ ও বীরত্বের কথা ।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি, এমপি বলেন, “সবাইকে গনতন্ত্রের চর্চা করতে হবে আর সেটা শুরু করতে হবে পরিবার থেকে এবং চাইল্ড পার্লামেন্ট একটি উপযুক্ত প্লাটফর্ম, যেখানে শিশুরা নিজেরাই নিজেদের সমস্যাগুলো তুলে ধরবে এবং সমস্যার সমাধান চাইবে। এজন্য চাইল্ড পার্লামেন্টের এ মহৎ উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।” এছাড়া তিনি আরো বলেন, “তোমরা যে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছো, সেগুলো সত্যিই বাস্তবিক এবং যুক্তিসংগত, তবে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রেই আজ উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছে এবং আমরা চেষ্টা করছি, বিশেষ করে শিশু, যুব এবং নারীরা যেন তারা তাদের ন্যায্য অধিকারগুলো পায়, তারা যেনো আরো বেশি সাবলম্বী হয়।  আর এজন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সর্বদায় কাজ করে যাচ্ছি”। 

তিনি চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশনে শিশু সাংসদদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার দেশের সকল স্তরে শতভাগ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।  ইতিমধ্যে সরকার প্রায় ৮০-৮৫ ভাগ প্রান্তিক অঞ্চলকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে পেরেছে। তবে এখনো পর্যন্ত সব জায়গায় ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ইন্টারনেট সেবা আরও উন্নত ও বিস্তৃত করতে মোবাইল কোম্পানির গুলোর সাথে আলোচনা করা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা যেন খুবই কম খরচে অনলাইনে ক্লাস ও অন্যান্য কার্যক্রম চালায় নিতে পারে। 


তিনি জানান “প্্রান্তিক অঞ্চলসহ সারাদেশের সকল শিশুরা যাতে শতভাগ শিক্ষা পায়, সে জন্য ইতিমধ্যেই আমাদের সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামুল্যে বই প্রদান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, মিড ডে মিলসহ লক্ষ্যাধিক প্রাথমিক স্কুল তৈরী করেছে। এছড়া বিশেষ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকার বদ্ধ পরিকর এবং আমি চেষ্টা করবো প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান উন্নয়নে ধীরে ধীওে আরো কাজ করতে এবং এসব অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আরো বেশি করে, বিশেষ বাজেট বরাদ্দ দিতে।” 

তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার শিশু সাংসদের এক প্রশ্নের জবাবে কোচিং-বাণিজ্য সম্পর্কে বলেন, “আমরা শিক্ষা আইনের চুড়ান্ত খসড়া করে ফেলেছি যা এখন মন্ত্রীসভায় পাঠানো হবে। সেখানে কোচিং বাণিজ্য সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোচিং থাকবে তবে সেটা বাণিজ্যের জন্য নয়, ক্লাসের দূর্বল ও ঝড়ে পড়া রোধ করতে এবার স্কুল ভিত্তিক কোচিং খোলা হবে । যেখানে শিক্ষার্থীরা নাম মাত্র মূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে। 



এছাড়া মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে, দেশের সার্বিক অবস্থা ভালো হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া,  শিশুদের সাইবার বুলিং, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন  এবং তিনি আশ^াস দেন, “শিশুদের তুলে ধরা সকল সুপারিশসমূহ হয়তো সব একসঙ্গে না হলেও পর্যায়ক্রমে সরকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবার চেষ্টা করবে এবং সকল সুপারিশ এবং চিহ্নিত সমস্যাসমূহ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে জানানো হবে।” তবে সবাইকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভ্যাস পরিত্যাগ করে ইতিবাচক মানুষিকতা নিয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য বিশেভাবে আহŸান জানান। তিনি সবার সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করে তার বক্তব্য শেষ করেন।

এছাড়া চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সাঈদ মো গোলাম ফারুক। তিনি সরকার কর্তৃক গৃহীত শিক্ষাবান্ধব নানা কর্মসূচি ও উদ্দ্যেগের ব্যাপারে সবাইকে অবহিত করেন। 


উল্লেখ্য ‘চাইল্ড পার্লামেন্ট’ বাংলাদেশে শিশুদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি শিশু সংগঠন যা শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত মোট ১৯টি চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ, আসক এবং ইয়েস বাংলাদেশ চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন আয়োজনে আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা করে আসছে।

শিক্ষা এর আরও খবর: