ভরা পূর্ণিমা-সেলিম মিয়া

ভরা পূর্ণিমার রাতে, ধনু নদীর তীরে গিয়েছিলাম। সবুজ ঘাসের বিছানায়, বসে ছিলাম। চাঁদের বুকে, চাঁদের বুড়ির, সুতো কাটা দেখছিলাম। মাঝে মধ্যে নদীর পানি বয়ে যাওয়া স্রোত আর মাছ ধরা জেলেদের নৌকা চলাচল আবছা আবছা আলোয় দেখতে খুব ভালো লাগছিল। দক্ষিণা বাতাসের, শীতলতা অনুভবে, কখন যেন নয়ন জুড়িয়ে ঝিম ঝিম আসছিল। হঠাৎ ক্ষিরে ক্ষেতের তিনজন পাহারাদার এসে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আমার মুখটা দেখে। নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে। আমার ঝিম কেটে যায়। দেখি, ওদের মুখে মাস্ক নেই। আমি প্রশ্ন স্বরে বললাম; জ্যোৎস্না রাত তবুও টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দেখছো কেন? তোমাদের মুখে মাস্ক নেই কেন? আমার এত কাছে এসেছো, কেন? পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে চলো। একজন বললো ও স্যার। বড় স্যার একা একা এখানে। খুব ভালো হলো। আমরা স্যারের পাশে বসি। গল্প করি। যেই কথা সেই কাজ। মাত্র এক ফিট ব্যাবধাণ রেখে বসে পড়ল। আমি বললাম একা না। আমার সঙ্গে তিনজন আছে। নদী, চাঁদ, আর সৃষ্টি কর্তা। আরেকজন অতি আস্তে ফিসফিসিয়ে বলল, স্যার মনে হয় আধ পাগল। আধ পাগল কথাটা বাতাসে ভেসে আমার কানে আসে। ওঁরা আমার কাছাকাছি বসে আছে। শান্তির খোঁজে নিস্তব্ধ নিরবে আসলাম। এখানে ও মহামারী ভাইরাস ছোঁয়াচে করোনা রোগের বিষয়ে সচেতন থাকার উপায় নেই। ভাবলাম নিজেকে সচেতন রাখছি। সচেতনতার লক্ষ্যে প্রতিদিন আমার দায়িত্ব প্রাপ্ত তিনটি ইউনিয়নে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতন থাকতে বলছি। বলা পর্যন্তই কি শেষ? লজ্জা দিতে কান ধরানোর একটা রেওয়াজ ছিল। জনৈক এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার করার কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। লাঠি পেটা করতে ও ভয় হয়। একবার এক ছেলেকে লাঠি দিয়ে একটা বাড়ি দিতেই অসতর্কতার কারনে, জোরে লেগে ফুলে যায়। প্রভাবশালীর ছেলে বিধায় আত্মসম্মান রক্ষার্থে আমার নামে মামলা করে। ঐ মামলা ঠেকাতে আমার অনেক বেগ পেতে হয়। অনেক কিছু ম্যানেজ করতে, সেসময় আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। সেই কথা মনে করে ভাবলাম, হে বিধাতা তুমিই একমাত্র ভরসা। আমি সচেতন থাকছি, অথচ অন্যরা তো সচেতন হচ্ছে না। তাহলে করোনা মুক্ত বাংলাদেশ হবে কবে? সৃষ্টি কর্তার উপর ভরসা করে, অবশেষে ফিরে এলাম চার দেয়ালের ছোট্ট ঘরে।