" প্রেয়সীর জন্য মরণ"..

 প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২০, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন   |   সাহিত্য-সংস্কৃতি



কবি- মোঃ রফিকুল ইসলাম

আরেকটু সামনে গেলে উজানী বাজার...
উজানী বাজারের দুই কিলোমিটার সামনেই গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার অন্তর্গত বাঁশবাড়িয়া গ্রাম..
 ওই গ্রামেই আমাদের বাড়ি..
ভ্যান ওয়ালা জব্বারকে কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে যায় রুঙ্গু.. প্রতি সপ্তাহে একদিন ছুটি পায়,খুলনার পিপলস জুট মিলে চাকরি করে রুঙ্গু । বাড়িতে দুই ভাই ও মা বাবা সহ সুন্দর সাজানো গোছানো একটি পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা রুঙ্গুর..
বাড়িতে যেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো - " মা কতদিন দেখিনি তোমায়,মা তোমাকে ছাড়া খুলনাতে আমার ভালো লাগেনা"...
মায়ের সাথে কুশল বিনিময় শেষে রুঙ্গু চলে গেল নিজ ভালোবাসার কাছে । প্রেয়সীকে না দেখলে যে তার ভালো লাগে না,সে ভালো থাকতে পারে না...
মায়ের মুখটা দেখে ব্যাগটা  কোনমতে রেখে রুঙ্গু চলে গেল
নিজ প্রেয়সীর চাঁদ মুখখানি দেখতে..
প্রেয়সীও জানে প্রতি শুক্রবারে তার প্রিয়জন রুঙ্গু চলে আসবে তার কাছে..
প্রেয়সীদের পরিবার ও জানে, তারাও ঠিক করে রেখেছে যে, রুঙ্গুর সাথে প্রেয়সীকে বিয়ে দেবে না কিন্তু,এ-কথা শুধু রুঙ্গু-ই জানে না । তাছাড়া ঘরের সকলেই জানে..রুঙ্গু যখন প্রেয়সীদের বাড়িতে আসে তখন প্রেয়সীদের সব কাজ করে দেয় । প্রেয়সীর জামাকাপড় কিনে দেয়,অন্যান্য সবকিছুই করে । এ-কথা ভেবে যে, প্রেয়সীকে তার সাথে বিয়ে দেবে...!!!
একদিন আমাদের বাড়ি থেকে রুঙ্গু ভাই আমার জামা-কাপড় এনে দিয়েছিল খুলনাতে,এজন্যই খুব কাছ থেকে রুঙ্গু ভাইকে চিনি..
খুবই ভালো মনের একজন
নিপাট ভদ্রলোক মানুষ..
মনে নেই কোনো কলুষতা, কাউকে ক্ষতি করার কোন ইচ্ছা, এমন মানুষ কোনদিন আমি দেখিনি । কালো গড়নের সুন্দর মানুষ কোন একদিন জানতে পারে প্রেয়সীকে তার পরিবার বিয়ে দেবে না তার সাথে..
প্রেয়সীর মায়ের মাধ্যমে -
এ কথা শোনার সাথে সাথে রুঙ্গুর মাথার উপরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সব সাধ‌ নস্যাৎ হয়ে গেল,স্মৃতির পটে ভেসে উঠলো প্রেয়সীর সাথে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো..
আম বাগানে ঘোরাঘুরি,বেড়াতে যাওয়া,বড় ভিটায় রাতের আঁধারে হাতেহাত,চোখে চোখ রেখে দেয়া কথাগুলো...!!!
বাংলার আকাশ-বাতাস সবকিছু বিষবাষ্প হয়ে উঠল তার কাছে...
প্রিয়জন হারানোর হাহাকার আর আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠলো 
বাংলার গগন-ধূলি...
রুঙ্গু উজানী বাজারে যেয়ে বিষ  কিনলো এবং মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়েই বিষপান করলো ।
মা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে,এই বিদায়-ই রুঙ্গুর শেষ বিদায়..!!! বাড়ি থেকে বিষপান করার সময় তার বড় ভাই দেখে ফেলল এবং তাকে দৌড়ে ধরার চেষ্টা করল কিন্তু রুঙ্গু বিষ হজম না হওয়া পর্যন্ত প্রচন্ড জোরে দৌড়াতে থাকলো..একসময় নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেল..
তখন অনেক চেষ্টা করে হাসপাতালে নিয়েও কোন কাজ হলোনা..

"প্রেয়সীর জন্য হলো মরণ"
       দেহ  হলো হরন..!!!
মায়ের বুকটা হলো খালি
কোন বাগানের হলি মালি..?
এখন প্রেয়সির সুখের সংসার,
বাড়ি-গাড়ি,গয়না-কড়ি আর,,
           সন্তান আছে যার,
    কে বলিবে রুঙ্গু আছে...?
                   হৃদয়ে  তার..
এখন প্রেয়সীর সুখের সংসার..!!