সন্তান এর প্রতি মায়ের ভালোবাসা নিয়ে লেখলেন সন্তান।

মোঃ আবদুল্লাহ ইত্তেহার,
আম্মু কতগুলো কুশর (আখ) এনেছেন বাহির থেকে। ভালো কথা। আমি কম্পিউটারে বসে কাজ করছি আর অনেকক্ষণ যাবত পাশের রুমে আম্মুর আখের উপরের আবরণ ছিলার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
ব্যাপার কি? এত আখ তো আম্মু খাওয়ার মত মানুষ না। আর এতক্ষণ ধরে কেউ কি আখ খেতে পারে। চোয়াল ব্যাথ্যা হয়ে যাওয়ার ও তো কথা। তাই আগ্রহ নিয়ে দেখতে গেলাম যে বলবো, তুমি এত কুশর খেতে পারো আগে জানতাম না তো।
ও মা, গিয়ে দেখি মা জননী আমার সব কুশর এতক্ষণ ধরে ছিলে ছিলে পিস পিস করে বক্সে ভরছেন। যেন মন চাইলে ফ্রিজ থেকে বের করে ইন্সট্যান্ট খেতে পারি।
- আয় হায় এগুলা কি করছো ?
- ফ্রিজে থাকবে, যখন লাগে নিয়ে খাইয়ো।
- আরে কুশর কি কেউ এভাবে ছুলে রাখে। (এত কিছু মানুষকে ছুলে রাখতে দেখছি। কুশর কোনদিন ফ্রিজে ছুলে রাখে এমনটা দেখছি মনে পড়ে না।)
- কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এমনটা করার কারণ।
- আম্মার উত্তরঃ দেখা গেল তোমরা কুশর ছুঁলতে গিয়ে মুখ ছুলে ফেলবা বা ছোকলা এদিক সেদিক ফেলবা তাই। (আসলেই কুশর ছুঁলতে গেলে কিন্তু অনেক সময় মুখ ছুলে যায়)
নাহ, আম্মুর এই কাজটা ঠিক হয় নাই। শুধু শুধু কষ্ট করেছে। তারও তো মুখ ছুলতে পারতো। এই ভেবে আবার কাজে মনোযোগ দিলাম।
পরে নামাযের মধ্যে আপন মনে, এই কথাটা আমার আবার মনে আসলো। আম্মু এইটা কি করলো। আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমাকে কুশর ছিলে দিতে হবে। এই কথাটা আমার পুরো নামাযে অনেকবার মনে পড়লো। আর যতবার মনে পড়ছিল ততবার আমার হাঁসি পাচ্ছিলো। আমার মা আমাকে এখনো বাবু মনে করে। হেহেহে......... এভাবে পুরো নামায মুচকি হেসে শেষ করলাম।
আর নামায শেষে শুরু করলাম মমতাময়ী মায়ের জন্য দোয়া।
কবরবাসী বাবার জন্য দোয়া। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।............
এখন যখন লিখছি তখনও হাঁসি পাচ্ছে। সত্যি বলতে, আমরা অনেকেই মায়েদের-বাবাদের এই ছোট ছোট ভালোবাসাকে মূল্যায়ন তো দূরে থাক 'মনে রাখার মত কিছু' বলে মনে করি না। আমি যেন সেই কাতারে না থাকি সেজন্য ঘটনাটা লিখে রাখলাম। মহান আল্লাহ আমাকে একজন নেক সন্তান হবার তাওফিক দান করুন। আমিন।